একুশে ফেব্রুয়ারি
বা , শহিদ দিবস
ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিবিজড়িত একুশে ফেব্রুয়ারি বা শহিদ দিবস বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ বপনের দিন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের সময় এর শাসনক্ষমতা দখল করে নেয় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী। ১৯৪৮ সালের ২১ শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সভায় পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। ঘােষণা করেন। বাঙালিরা তা মেনে নেয়নি। ২৪ শে মার্চ কার্জন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি একই ঘােষণা দেন। শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে রাজপথে নামে বাংলার জনগণ। ১৯৫২ সালের ২৬ শে জানুয়ারি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন জিন্নাহকে অনুসরণ করে উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘােষণা দিলে ভাষা আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে।
সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে মিটিং , মিছিল , শােভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে দেয়। কিন্তু মাতৃভাষাপ্রেমিক বাঙালিরা তা মেনে নেয়নি। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি মৃত্যুভয়ে ভীত না হয়ে তারা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে রাজপথে নামে। পুলিশ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। তাতে শহিদ হন সালাম , বরকত , রফিক , জব্বারসহ নাম না জানা আরাে অনেকে। তাই এ দিনটি আমাদের কাছে শহিদ দিবস নামে পরিচিত। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। ভাষার জন্যে এরকম আত্মত্যাগের ইতিহাস বিরল। মহান একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব ও তাৎপর্যের প্রেক্ষাপটে ১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ' হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। একুশে ফেব্রুয়ারি বা শহিদ দিবস তাই আমাদের অহংকার।