বৈশাখি মেলা
মেলা আমাদের গ্রামবাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য। আবহমান বাংলার লোকসংস্কৃতির অংশ। তার মধ্যে বৈশাখি মেলা উল্লেখযোগ্য। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বৈশাখি মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলার মাধ্যমে এক গাঁয়ের মানুষের সঙ্গে অন্য গায়ের মানুষের পরিচয় ঘটে , পরিচিতজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় এবং ভাবের আদান - প্রদান হয়। এতে সুদৃঢ় হয় সম্প্রীতির বন্ধন। সারা বছরই দেশের কে বাও না কোথাও মেলা হতে দেখা যায়। বৈশাখি মেলা সাধারণত বৈশাখ মাসের প্রথম দিন থেকে শুরু হয়। এ মেলা চলার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। একদিন থেকে এ মেলা মাসব্যাপী স্থায়ী হতে পারে। বৈশাখি মেলার মাধ্যমে নতুন বছরের মানুষের আনন্দ অনুভূতির প্রকাশ ঘটে। বৈশাখি মেলাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মেলা যে একটা মিলনক্ষেত্র তার প্রমাণ মেলে বৈশাখি মেলায়। ধর্ম , বর্ণ , সম্প্রদায় নির্বিশেষে লোকসমাগম ঘটে মেলা প্রাঙ্গণে। বৈশাখি মেলায় আসা বৈচিত্র্যময় পণ্যের শেষ নেই।
হস্ত ও কুটির শিল্পজাত দ্রব্যের মধ্যে শীতল পাটি , নকশিকাঁথা , বাঁশ - বেতের তৈরি ডালা , হাতপাখা , কুলা , ডালঘুঁটনি , নারকেলকোরা , মাছ ধরার কোঁচ , পলো , ঝাকিজাল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মৃৎশিল্পের সামগ্রীর মধ্যে মাটির হাড়ি - পাতিল , পাতিলের ঢাকনা , কলস , মটকা , হাতি , ঘোড়া , ফুলদানি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। লোহা ও কাঠের তৈরি সামগ্রীর মধ্যে দা , বঁটি , কাস্তে , ছুরি , খুন্তি , কোদাল , শাবল , পিঁড়ি , জলচৌকি , চেয়ার , টেবিল , খাট - পালঙ্ক ইত্যাদি পাওয়া যায়। এছাড়া মুখরোচক খাদ্য মুড়ি - মুড়কি , খই , খাজা , কদমা , বাতাসা , জিলেপি , আমিত্তি , নিমকি , রসগোল্লা , নারকেলের নাড়ু , রেশমি মিঠাই ইত্যাদি বৈশাখি মেলার বিশেষ আকর্ষণ। মেলায় বিনোদনের জন্যে থাকে নাগরদোলা , পুতুলনাচ , বায়স্কোপ , সার্কাস ও ছোটদের নানারকম খেলনা। বৈশাখি মেলা আনন্দের পাশাপাশি আমাদের জীবনের অনেক প্রয়োজন মেটায়।