কর্মমুখী শিক্ষা
সূচনা :
শিক্ষা মানুষের জীবনের উন্নতির চাবিকাঠি। মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তির উন্মেষ ঘটায় শিক্ষা। জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনে সহয়তা করে শিক্ষা। আধুনিক পৃথিবীতে নতুন নতুন আবিষ্কার এবং অগ্রগতির দরুন মানবজীবনে নিত্যনতুন কর্মদিগন্ত খুলে গেছে। এই সব কর্মে যােগদান করার জন্য বিশেষায়িত শিক্ষাও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এই কারণে বিজ্ঞানের এই উন্নতির যুগে বিশ্বে সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কর্মমুখী শিক্ষাক্রমেই অধিকতর গুরুত্ব অর্জন করেছে।
কর্মমুখী শিক্ষা কী :
কর্মমুখী শিক্ষা হচ্ছে মানুষের জীবিকা অর্জনে সহায়ক শিক্ষা। যে শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ কোনাে একটা বিষয়ে বাস্তব প্রয়ােগ জ্ঞান লাভ করে এবং শিক্ষা সমাপ্ত হলে জীবিকার্জনের যােগ্যতা অর্জন করে তাকেই কর্মমুখী শিক্ষা বলে। অর্থাৎ কর্মমুখী শিক্ষা হচ্ছে জীবিকা অর্জনের জন্য সম্ভাব্য পেশার সাথে সম্পর্কিত শিক্ষা।
কর্মমুখী শিক্ষার প্রকারভেদ :
কর্মমুখী শিক্ষাকে শুধুমাত্র যান্ত্রিক শিক্ষা বলা উচিত নয়। কেননা পুরােপুরি জীবনবােধের আলােয় বিচার করা হয় একে। কর্মমুখী শিক্ষাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন একটি হলাে উচ্চতর কর্মমুখী শিক্ষা , তারা বিজ্ঞান বিষয়ে পারদর্শী থাকে। চাকরির আশায় তাদের বসে থাকতে হয় না। বিভিন্ন কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে এ সকল শিক্ষার্থী স্বাধীন পেশা অবলম্বন করতে পারে। আরেকটি হলাে— সাধারণ কর্মমুখী শিক্ষা। এর জন্য প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্তরের পড়াশােনাই যথেষ্ট। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স জিনিস এবং প্রয়ােজনীয় গৃহস্থালি জিনিস মেরামতসহ নানা কাজে পারদর্শী হয় তারা। কর্মমুখী শিক্ষায় পারদর্শী ব্যক্তি স্ব - স্ব ক্ষেত্রে কর্মদক্ষ হয়ে গড়ে ওঠে বলে বেঁচে থাকার জন্য কাজের কথা ভাবতে হয় না।
কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা :
আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতি এখনাে সেই ইংরেজ আমলের। তাই কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে যারা বের হচ্ছে তারা কাজের ক্ষেত্র খুঁজে পাচ্ছে না। বেকারত্বের কারণে। তারা হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে। এই অবস্থা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার জরুরি। কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি দেশে এবং দেশের বাইরে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে উন্নতি সাধন করে। এটা মূলত দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ও দারিদ্র্য দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। কর্মমুখী শিক্ষা স্বাধীন পেশা গ্রহণে ব্যক্তির আস্থা গড়ে তােলে এবং তাকে স্বাবলম্বী করে তােলে। তাই বিজ্ঞানের এই বিস্ময়কর উন্নতির যুগে কর্মমুখী শিক্ষা আমাদের মতাে উন্নয়নশীল দেশের জন্য অত্যাবশকীয় হয়ে পড়েছে।
কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার :
বাংলাদেশে কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্র ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। দেশে প্রকৌশল , বিজ্ঞান প্রযুক্তি এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া প্রকৌশল ইনস্টিটিউট , পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও ভােকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট , লেদার টেকনােলজি কলেজ , টেক্সটাইল টেকনােলজি কলেজ , গ্রাফিক আর্ট ইনস্টিটিউট ইত্যাদির মতাে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে। যেখানে কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণের বিস্তর সুযােগ রয়েছে। তাছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে কর্মমুখী শিক্ষা প্রসারে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেমন— কৃষিবিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য বিজ্ঞানকে বাধ্যতামূলককরণ , পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডবল শিফট চালু , নবম ও দশম শ্রেণিতে বেসিক ট্রেড কোর্স চালু। ১৯৯৫ সাল থেকে সাধারণ শিক্ষা ও ভােকেশনাল শিক্ষার সমন্বয়ে এস.এস.সি শিক্ষাক্রম এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ব্যবসা ব্যবস্থাপনা শিক্ষাক্রম প্রবর্তন করা হয়েছে। যেগুলাে কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন।
উপসংহার :
আমাদের দেশ বেকার সমস্যাসহ সামাজিক কুসংস্কার , রাজনৈতিক অস্থিরতা , সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠে উপযুক্ত সমাজ গঠনে তরুণসমাজকে সাহায্য করবে এই কর্মমুখী শিক্ষা। আমাদের জাতীয় জীবনের উন্নয়নের স্বার্থে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার অপরিহার্য। তাই এর প্রসারে আমাদের অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।