ভােগে নয় , ত্যাগেই সুখ।
অথবা, ভোগে নয় , ত্যাগেই মনুষ্যত্বের বিকাশ।
মূলভাব :
বাস্তবজীবনে মানুষ ভােগকে বেশি গুরুত্ব দেয়। মনে করে ভােগের মধ্যেই জীবনের সর্বসুখ। কিন্তু ভােগ-বিলাসে সাময়িক সুখ থাকলেও এতে প্রকৃত সুখ নেই। ত্যাগের মধ্যেই প্রকৃত সুখ নিহিত।
সম্প্রসারিত ভাব :
ভোগ ও বিলাসিতায় মানুষ আনন্দ লাভ করে এবং এ আনন্দ ক্ষণিকের , এতে সুখ নেই। এটা এক ধরনের আসক্তি। এ আসক্তি যখন মানুষকে পেয়ে বসে তখন সংসারের কর্তব্যকর্ম ত্যাগ করে এতে গা ভাসিয়ে দেয়। এতে আসলে সুখ মেলে না। প্রকৃত সুখ পাওয়া যায় ত্যাগের মাঝে। ভােগের মাধ্যমে মানুষ জীবনের সুনির্দিষ্ট লক্ষে পৌঁছতে পারে না। একমাত্র ভােগবাদীরা ভােগের মাধ্যমে সুখ খোঁজার চেষ্টা করে। তাদের সমস্ত সম্পদ ভােগ - বিলাসে নিয়ােজিত করে। এসব মানুষ পরিবার , সমাজ , রাষ্ট্র কারও কথা না ভেবে ব্যক্তিগতভাবে ভােগে ব্যস্ত থাকে। ভােগী মানুষ চরম স্বার্থপরের মতাে কেবল নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। পারিপার্শ্বিক কারাে কথা সে চিন্তা করে না। সত্যিকার অর্থে তারা মানুষ নয়।
মৃত্যুর সাথেই তাদের সবকিছু নিঃশেষ হয়। তারা যত কিছুই করুক না তার কোনাে কিছুরই স্থায়িত্ব থাকে না। একমাত্র ত্যাগের মাধ্যমেই মানুষ চিরদিন বেঁচে থাকে। যারা ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর তারা নিজের জন্য কখনও ভাবেন না বরং পরের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য তাদের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয় , এমনকি তাদের জীবনটাই উৎসর্গ করে। তারাই পায় মানুষের স্বীকৃতি। তারা তাদের কর্মের মাধ্যমে অমরত্ব লাভ করে। ত্যাগের মাধ্যমে মানুষের মনুষ্যত্ব বিকশিত হয়। ত্যাগী মানুষ আনন্দ ও তৃপ্তি লাভ করেন। তাদের দ্বারাই জগতের কল্যাণ সাধিত হয়। পৃথিবীতে যত কল্যাণ সাধিত হয়েছে সবই তাদের ত্যাগেই হয়েছে। ত্যাগীরা মানুষের হৃদয়ে সিংহাসনে চিরদিন অধিষ্ঠিত থাকবে।
মন্তব্য :
ত্যাগের মাধ্যমে মানুষের আত্মমুক্তি ঘটে। আর এ আত্মমুক্তির দ্বারা মানুষ জীবনকে আস্বাদন করে। ত্যাগ মানুষকে অনাবিল আনন্দ দান করে এবং তাকে মহান করে তােলে। তাই বলা যায় , ভােগে নয় , ত্যাগেই জীবনের গৌরব। অর্থাৎ প্রকৃত সুখ ত্যাগেই নিহিত।